আনুবাদ মিডিয়া আল্প আরসালান ভলিউম ২০ বাংলা সাবটাইটেল-

ভলিউম দেখতে পোস্টের নিচে যান
অন্য যে কোনো পূর্বতন সুলতানের তুলনায় ভয়ংকর হয়ে ওঠে মুরাদ ।
যিনি নিজে দিনে বা রাতে, বেশে বা ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন সৈন্যদের মাঝে ।
বেআইনি সমাবেশ ভেঙে দিয়ে তার পুলিশি নীতিকে অগ্বাহ্যকারীকে নিজ হাতে
শাস্তি দি-তন।
পরবর্তীতে সাম্রাজ্যের সব ক্যাফে আর ওয়াইনের দোকানও বন্ধ
করে দেন সুলতান, যেন জনগণ একত্রিত হতে বা বিদ্রোহের বীজ না ছড়াতে
পারে। এছাড়া টোবাক্যোকেও বেআইনি ঘোষণা করেন। যদি এমন কাউকে
পাওয়া যেত যে রাতের বেলা পাইপ টানছে, কফি পান করছে, ওয়াইনসহ ধরা
পড়ত; তাহলে তাকে তৎক্ষণাৎ ফাসি দেয়া হতো আর মৃতদেহ রাস্তায় ছুড়ে
ফেলে দেয়া হতো অন্যদের শিক্ষা নেওয়ার উদ্দেশ্যে।
ধীরে ধীরে সময় যত গড়িয়ে চলে মুরাদের রক্তপিপাসা ততই বেড়ে চলে ।
প্রথম দিকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিলেও পরবর্তীতে তুচ্ছাতিতুচ্ছ
কারণে অভিযোগ না থাকলেও বা কম প্রমাণিত হলেও মৃত্যুদণ্ড দিতেন
সুলতান। এভাবে দুর্নীতি দমন করতে গিয়ে মানবজীবনের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে
ফেলেন মুরাদ। হত্যা করার জন্যই আচরণে সব জায়গাতে সৃষ্টি হয় শীতল ও
ভীতিকর এক নীরবতা । বোবা ভূত্যের ন্যায় কেউ কথা না বললেও ভাষা
ফুটতে থাকে তাদের চোখের পাতায়, ঠোটের নড়াচড়ায়, দাতের কিড়মিড়ে।
মুরাদের নিষ্ঠুরতা পৌরাণিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
মাঝ নদীতে আনন্দ-নৃত্যগীতে রত একদল মহিলার শব্দে সুলতানের
বিরক্তি উৎপাদন হওয়ায় তাদের সবাইকে ধরে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
নিজের একজন চিকিৎসককে তারই অফিসের ওভারডোজ গিয়ে মৃত্যুবরণে
বাধ্য করেন সুলতান। ভুলবশত সুলতানার পুত্র প্রসবের সংবাদ আনায় এক
সংবাদ বাহককে পঙ্গু বানিয়ে দেন সুলতান, কেননা সুলতানা কন্যা প্রসব
করেছিলেন। নিজের প্রধান বাজনাবাদকের মস্তক কেটে ফেলেছিলেন সুলতান।
তার অপরাধ ছিল পারস্যের গান গাওয়া ।
একজন প্রিয় দরবেশ সুলতানকে দক্ষ কসাইকারী হিসেবে আখ্যায়িত করায়, সুলতান হেসে উত্তর দেন,
“প্রতিশোধ ধূসর হতে পারে । কিন্তু জরাগ্রস্ত হয় না।” এটা বলা হয় যে মাত্র
পাঁচ বছরে সুলতান মুরাদ পঁচিশ হাজার মানুষকে নিশ্চিহ করার আদেশ দেন।
এদের অনেকেই আবার তার নিজের হাতে মৃত্যুবরণ করে।
এতদসত্ত্বেও মুরাদের শাসনামল রাজ্যকে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার হাত থেকে
বাচায়। তিনি শুধু কোনো ব্যক্তিকেই শাসন করতেন না, বরঞ্চ অপরাধ
প্রমাণিত হলে উপরওয়ালাদেরও ছাড়তেন না। ফলে স্থানীয় ছোটখাটো
স্বৈরশাসকেরা নির্মূল হয়ে যায়। এভাবে লৌহ শাসনামলে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত
হয়। ব্যারাকে নিয়মশৃঙ্খলা ফিরে আসে, রাজদরবারে ন্যায়বিচার ।
সৈন্যবাহিনীকে শক্তিশালী করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেন সুলতান।
সাম্রাজ্যের কর সংগ্রহের পরিমাণ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সতভাবে প্রশাসনিক
কাজ চলতে থাকে। প্রশাসন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সিপাহিদের বাড়তি সুবিধাসমূহ
বাতিল করা হয়। সামন্ত প্রভুদের গীড়ন সংস্কার করে কৃষকদের জন্য বৈধ
নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
মোটের ওপর মুরাদের ক্ষমাবিহীন সামরিক শক্তির ব্যবহারের ফলে
এশিয়াতে অটোমান সাম্রাজ্যের উদ্দেশ্য পূরণ হয়। বসফরাস পার হয়ে
মুরাদের প্রথম অভিযান ছিল সংক্ষিপ্ত। বার্সাতে অগ্রসর হওয়ার সময়ে রাস্তার
বেহাল দশা দেখে তৎক্ষণাৎ ফাঁসি দেন নিকোমিডিয়ার বিচারককে। এর ফলে
ইস্তাম্বুলে উলেমা সম্প্রদায় খুশিতে উচ্ছৃসিত হয়ে ওঠে।
এরপর দ্রুত ইস্তাম্বুলে ফিরে এসে প্রধান মুফতির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন সুলতান । এশিয়া মাইনরে
সুলতান । বসনিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আব্যজাকে ইস্তাম্বুলে
ডেকে পাঠানো হয় আজ হিসেবে কাজ করার জন্য। কিন্তু শত্রুদের প্ররোচনায়
সুলতান তার প্রতি রুষ্ট হয়ে অবশেষে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন । অবশেষে ১৬৩৫
সালের বসন্তে প্রথম এশিয়া অভিযানে বের হন সুলতান। নিজের এশীয়
অঞ্চলে পরিদর্শনকালে প্রতিটি যাত্রা বিরতি সুলতানের কসাই চরিত্রের সাক্ষী
হয়ে থাকে ।
নিজের কর্মচারীদের মাঝে দুর্নীতিগ্রস্ত বা অযোগ্য সকলকে বিনাশ
করেন সুলতান। এরপর পারস্যদের দখল থেকে রিভানকে মুক্ত করতে অগ্রসর
হন সুলতান । মুরাদের নিয়ম-নীতি ছিল কঠোর। কিন্তু জেনারেল হিসেবে
সকলের শ্রদ্ধা আদায় করে নেন সুলতান । নিজে ব্যক্তিগতভাবে সৈন্যদের কষ্ট
সহভাগিতা করতেন সুলতান। নিজের বাহিনীর কাছ থেকে বিক্রম প্রত্যাশা
করে সৈন্যদের উৎসাহ দিতেন স্বর্ণ ও রৌপ্যের থলে দিয়ে। “প্রসন্্তা নয়
আমরা নেকড়েরা, তোমাদের ডানা ছড়ানোর সময় এসে গেছে আমার
ঈগলেরা |”
রিভান জয় করে ইস্তাম্বুলে বিজয়ীর রথ প্রস্তুতের আদেশ দেন সুলতান ।
এছাড়াও নিজের দুই ভ্রাতাকে হত্যার নির্দেশে দেন সুলতান। সিংহাসনে
আরোহণের সময় নয়; কিন্তু এই বিজয়লগ্রে এটিকে অসংগত মনে হয় না
সুলতানের কাছে। তিনি আশা করতে থাকেন যে ভ্রাতৃহন্তার কান্না বিজয়ের
গৌরব আনন্দে ঢাকা পড়ে যাবে। শবাধারীদের মশালের আলো শহরের
উৎসবের আলোর নিচে ঢেকে যাবে ।