বোজকির আরসলান জালালুদ্দিন ভলিউম ১ বাংলা সাবটাইটেল অনুবাদ মিডিয়া

ভলিউম দেখতে পোষ্টের নিচে যান
সংস্কারক সুলতান মাহমুদ ধের্ষের সাথে পুরো সতেরোটি বছর অপেক্ষা করেছিলেন, পরিবর্তনের ধারণাকে কাজে পরিণত করার জন্য। এর মাধ্যমে ইসলামের ওপর নির্ভরশীল মধ্যযুগীয় তুর্কি-রা আধুনিক সাংবিধানিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় পশ্চিমে ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণার ওপর ভিত্তি করে। নতুন প্রতিষ্ঠান ও সহজ সরকারের ধারণার ওপর ভিত্তি করে অতীতের সাথে সম্পর্কেচ্ছেদ করেন সুলতান মাহমুদ । যেমনটা এ সময় ইউরোপেও হচ্ছিল ।
মাহমুদের দৃষ্টিতে সুলতানের ক্ষমতাকে একচ্ছত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অবশ্য প্রয়োজনীয় ছিল। রাজধানী বা রাজ্যের প্রদেশ যেখানেই হোক না কেন, সর্বময় ক্ষমতা হবে একাকী সুলতানের । বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর মাহমুদ এ ক্ষমতা লাভ করেন। সুলতান তৃতীয় সেলিমের সংস্কারবাদী বন্ধুদের দেশত্যাগ বা হত্যাকাণ্ডের কারণে সুলতান মাহমুদ একাকী এ কর্ম সম্পাদন করেন। দৃঢ়তা, অধ্যবসায় ও দুরদর্শিতার মতো অসাধারণ সব চারিত্রিক গুণাবলি ছিল সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের । বাস্তবতার নিরিখে বিচার করে পদ্ধতিগতভাবে সমস্যার সমাধান করতেন সুলতান মাহমুদ । পূর্বপুরুষদের সংস্কারকাজে বাধাদানকারী শত্রুকে নির্মূল করেছেন চারিত্রিক শক্তি ও সাহস দিয়ে।
প্রথমেই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য প্রাদেশিক ক্ষমতার বিনাশ করেছেন সুলতান। বিদেশি আক্রমণে যে কোনো মুহূর্তে কেপে উঠবে এমন একটি সাম্রাজ্যে সুলতান অন্তত আভ্যন্তরীণ অরাজকতা বন্ধ করে এক ধরনের ইতিবাচক এঁক্য নিয়ে এসেছেন। অতি ধীরে ধৈর্যের সাথে নিজের বিদ্বোহী পাশাদের দমন করেছেন।
এরপর অগ্রসর হয়েছেন ক্ষমতার অপব্যবহারকারী উপত্যকাসমূহের প্রভূ ও অবিশ্বস্ত প্রদেশপ্রধানদের দিকে। বেন্দ্রীয়করণের ক্ষেত্রে প্রশাসক ও জনগণের মাঝের সকল মধ্যবর্তী উৎসের সমাপ্তি টানার জন্য দমন করেছেন স্থানীয় শক্তিদের। এভাবে আনাতোলিয়া ও রুমেলিয়ার বিশাল অঞ্চলে নিজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এ প্রক্রিয়ার একটি ছিল জানিনাতে নিষ্ঠুর আলী পাশার অপসারণ । এর মাধ্যমে পথ খুলে যায় অটোমান রাষ্ট্রের ভেতরেই সবচেয়ে বড় শত্রু জানিসারিসদের ক্ষমতার অবসান করার । একদা অটোমান রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বীরপুরুষরাই এখন এর পতনের কারণ হয়ে দীড়িয়েছে। জানিসারিসদের চিরতরে শান্ত না করা পর্যন্ত কোনো সংস্কার অভিযান সম্ভব ছিল না। ১৮২৬ সালের খ্রীন্মে এই আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেন সুলতান । ঠিক সময়টিই নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
ইব্রাহিম পাশার হাতে মেসোলঙ্ঘির পতনের পর সুলতান অনুধাবন করেন যে তীর নিজ সাম্রাজ্যের একটি আধুনিক সেনাবাহিনী কতটা দরকার। মিশরে মামলুকদের পরাজিত করার মাধ্যমে মাহমুদ আলী প্রমাণ করে দিয়েছেন ইউরোপীয় ঘরানার প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতা যে কোনো মুসলিম সেনাবাহিনীও আয়ত্ত করতে পারে । আর এ ধরনের সংস্কারকাজ হাতে নেয়ায় পশ্চিমে তীর শ্রদ্ধা ও সমর্থন বেড়ে যায়।
জানিসারিসদের বিরুদ্ধে এই সেনা অত্যুর্থানের জন্য সুলতান তার নিজের গোলন্দাজ বাহিনীকে আরো উন্নত ও বিস্তৃত করে তোলেন । বিশ্বস্ত অফিসারদের বাছাই করে নিষ্ঠুর এক জেনারেলকে দায়িত্ প্রধান করেন সুলতান । “কৃষ্ণ নরক” হিসেবে যার খ্যাতি ছিল। বসফরাসের পেছনের এশিয়া থেকে সেনাবাহিনী প্রস্তত রেখেছিলেন সুলতান যথাসময়ে পুনর্নিয়োগের জন্য। এর পর সুলতান রাষ্ট্রের সব গুরুতৃপূর্ণ পদে বিদ্বান ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করেন। এরা সকলেই তার স্বার্থে সমর্থন জানায় ও সকলের সম্মিলিত স্বাক্ষরে সুলতান ফতোয়া জারির মাধ্যমে নতুন সৈন্যদলের ভিত্তি স্থাপন করেন।
যদিও তৃতীয় সেলিমের নতুন শৃঙ্খলার পরিকল্পনা ছিল এটি; কিন্তু সুলতান মাহমুদ এ নীতিকে সুলতান সুলেমানের পুরাতন অটোমান সেনাবাহিনীর পুনর্জীগরণের মতো করে উপস্থাপন করেন। জাতির ক্রান্তি লগ্নে যাদের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যার অতীত । নির্দিষ্ট করে বলা হয় খ্রিস্টান বা বিদেশি নয়, সু-প্রশিক্ষিত মুসলিম অফিসার তাদের পরিচালনা করবে । প্রধান মুফতি এবং উলেমাও এতে সমর্থন জানায় ৷ জানিসারিসদের প্রতিটি ব্যাটালিয়ন থেকে ১৫০ জন করে নতুন সৈন্যদলে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া হয়।
যেমনটা সুলতান ধারণা করেছেন, জানিসারিসরা এনিয়ম প্রত্যাখান করে । ১৮০৭ সালের মতো করে আরো একবার তারা হিপোড্রোমে ভেঙে পড়ে, গণহত্যা করতে করতে প্রাসাদের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু এই সময় সুলতান তাদের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তার সেনা ও গোলন্দাজ বাহিনী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। তাকে সমর্থনকারী হাজারো মানুষ সিংহাসন রক্ষায় অগ্রসর হয়। মাহমুদ ব্যক্তিগতভাবে নবীজির পবিত্র স্তন্ত উন্মুক্ত করে বিশ্বাসীদের আহ্বান করেন এর নিচে এসে দীড়াতে। জানিসারিসদের উত্তেজিত ভিড় সেরাগলির সামনে সংকীর্ণ রাস্তায় পৌছালে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষিত হয়। ছত্রভঙ্গ হয়ে নিজেদের ব্যারাকে ফিরে যায় জানিসারিসরা ৷ আক্রমণের ভয়ে ব্যারিকেড প্রস্তুত করে।
কিন্তু কোনো আক্রমণ হয়নি। সেনাবাহিনী হারাবার ঝুঁকি না নিয়ে গোলন্দাজ বাহিনী ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে। মুহূর্তের মাঝে চার হাজার বিদ্বোহী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মাত্র আধা ঘণন্টারও কম সময়ের মাঝে একসময়কার ইউরোপের ত্রাস ও পতনোনুখ অটোমান সুলতানদের পক্ষেও ভীতিকর পাচ শতকের পুরোনো বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়। প্রদেশসমূহে আরো হাজার হাজার মৃত্যুবরণের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে । জানিসারিসদের নাম মুছে, স্তম্ভ ধবংস করে ফেলেন সেই একই দিনে।
এরপর এক মাস পর জানিসারিসদের মদদদাতা বেকতাশী দরবেশদের ভ্রাতৃসংঘ নিষিদ্ধ করে, আশ্রম পুড়িয়ে দেয়া হয়। প্রধান নেতাদের জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ও অনেক পুরোধাই বিদেশে পালিয়ে যায়। এই “শুভ লক্ষণ যুক্ত ঘটনা”-র মাধ্যমে সুলতান মাহমুদ নিজের সীমান্তের মাঝে বিরোধিদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করেন। নতুন তুর্কি সেনাবাহিনী গঠিত হয় ধৈর্যশীল দৃঢ়প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে মাত্র এক ঘণ্টাতেই শক্তিশালী ও জ্ঞানী সুলতান নিজের অটোমান পূর্বপুরুষদের ন্যায় একনায়কত্ব কায়েম করেন।
কিন্ত নতুন ভবিষ্যতের ইতিহাসের জাগরণ ঘটিয়েছেন। এর পর আসে আলোকিত উন্য়ন। যার মাধ্যমে সুলতান স্থায়ী ও স্বাধীন সমাজের জন্য নিজের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন। উত্তরসূরিদের জন্য রেখে যান নতুন ধরনের বিস্তৃত সংস্কার- নীতি । যার মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে তুরস্ক পশ্চিমা সভ্যতার সাথে সাহচর্য গড়ে তোলে।
বোজকির আরসলান জালালুদ্দিন ভলিউম ১ বাংলা সাবটাইটেল